Search  



                                               

                                           

Md. Mamunur Rashid

Home  |  Bangladesh  |  হাসা-হাসি  |  ইসলাম  |  গল্প  |  

FacebookTwitter


 

Home >> ছায়া পুরুষ

তন্দ্রা এটা চায়নি। সে জীবনটাকে সাজাতে চেয়েছিল নিজের মতো করে, তার স্বামী থাকবে, সংসার থাকবে, সন্তান থাকবে, এই সব নিয়ে সে একটা স্বর্গ রচনা করবে, স্বর্গ! সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই তাড়াহুড়া করে স্বামীর জন্য নাস্তা তৈরি করবে, বাচ্চাকে স্কুল যাওয়ার জন্য কাপড়-চোপড় পরিয়ে দিবে। সবাই নিজ নিজ কাজে বেরিয়ে পড়ার পর সে সংসার গুছানোর কাজে লেগে যাবে। কাজ শেষে সবাই বাসায় ফিরবে, নীরব বাসা সরব হয়ে উঠবে, বাসা প্রাণচাঞ্চল্যে ভরে উঠবে। তার এই চাওয়াটা বাড়তি কিছু না, সবাই যা চায় সেও তাই আশা করেছে। তার সেই আশা পূরণ না হওয়ারও কোন কারণ নেই। সে পেয়েছেও সবকিছু, স্বামী আছে, সংসার আছে, ছোট্ট ফুটফুটে সুন্দর একটা মেয়ে আছে। তাহলে নেই কী? প্রেম? ভালোবাসা? দাম্পত্য সুখ? সমস্ত কিছুর মধ্যে প্রাণের ছোঁয়া?
তন্দ্রা পারভেজের ভালো বন্ধু হতে চেয়েছিল, হতে চেয়েছিল ভালো প্রেমিক তারপর সারাজীবনের সঙ্গী। সবকিছুই হলোও ঠিকমতো কিন্তু যাকে নিয়ে এতকিছু ভাবনা, স্বপ্নের জাল তৈরি করা সেই মানুষটি বদলে গেল ক’দিনেই, তন্দ্রা অনুভব করল বন্ধু পারভেজ, প্রেমিক পারভেজ আর স্বামী পারভেজের মধ্যে তফাৎ অনেক। অনেকটা পরস্পর বিপরীত মেরুর তিন তিনটি আলাদা মানুষ।
পারভেজ যখন বন্ধু ছিল তখন তন্দ্রার মনে হতো পৃথিবীতে এত আপন মানুষ আর হয় না। যার সাথে সবকিছু শেয়ার করা যায়, পরামর্শ পাওয়া যায়, সহযোগিতা পাওয়া যায় এবং দুঃসময়ে পাশে পাওয়া যায়। এই সম্পর্কটাতে পারভেজ ভালো পারফরমেন্স দেখিয়েছে, বন্ধু হিসেবে পারভেজ যেন এক’শ তে এক’শ।
প্রেমিক পারভেজ ছিল আবেগপ্রবণ, একসময় তন্দ্রাকে সে এতো বেশি ভালোবাসতো যে তন্দ্রার মনে হতো পারভেজ তার জন্য সবকিছু করতে পারবে। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী তরুণী, অঢেল অর্থ বিত্ত, বিষয়-সম্পত্তি সবকিছুই একদিকে ফেলে তন্দ্রাকে নিয়ে সে খোলা আকাশের নিচে যাযাবোরের মতো সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারবে। পারভেজ করেছেও তাই।
তন্দ্রা যখন মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্রী তখন পরিচয় হলো পারভেজের সঙ্গে। তন্দ্রার ক্লাস ফ্রেন্ড মিতুর বড় ভাই পারভেজ। সেদিন দুপুর থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি, তন্দ্রা আর মিতু লবিতে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি ছাড়ার জন্য অপেক্ষা করছিল। বৃষ্টি ছাড়ারও কোন লক্ষণ নেই দেখে মিতু ফোন করল, হ্যালো ভাইয়া।
কী রে তুই কোথায়?
ভাইয়া ভার্সিটিতে আটকা পড়ে গেছি, তুমি একটা গাড়ি পাঠিয়ে দাও না।
গাড়ি পাঠাব, আমার ড্রাইভার তো ছুটিতে।
তাহলে তুমিই চলে এসো।
কিন’ আমি তো এখনো লাঞ্চ করিনি, তোর কাছে যেতে আসতে আমার তো অনেক সময় লাগবে।
ভাইয়া প্লিজ!
ওকে তুই দাঁড়া আমি আসছি।
কিছুক্ষণের মধ্যে একটা গাড়ি লবিতে এসে দাঁড়াল।
মিতু তন্দ্রাকে জিজ্ঞেস করল, তন্দ্রা তুই কোথায় যাবি?
কলাবাগান।
আমার সঙ্গে আয়, আমি তো ধানমণ্ডি যাবো, তোকে লিভ দিব।
থ্যাঙ্ক ইউ মিতু।
পারভেজ গাড়ির দরজা খুলতেই মিতু আর তন্দ্রা গাড়িতে উঠল।
মিতু পরিচয় করে দিল, ভাইয়া এ হচ্ছে তন্দ্রা আমার ফ্রেন্ড আর তন্দ্রা আমার ভাইয়া।
তন্দ্রা সালাম দিল।
গাড়িতে আর কোন কথা হলো না।
বৃষ্টির মাত্রা যেন আরো বেড়ে গেছে, রাস্তায় তেমন যানজট নেই। গাড়ি কিছুক্ষণের মধ্যে মিরপুর রোডের একটা রেস্টুরেন্টের সামনে এসে দাঁড়াল।
মিতু জিজ্ঞেস করল, দাঁড়ালে কেন?
তোকে বললাম না আমার খিদে লেগেছে।
মিতু খুব খুশি হলো, ওয়াও তুমি লাঞ্চ করাবে।
তন্দ্রা মৃদু আপত্তি করল, আমি চলে যাই রে।
তুমি যাবে কীভাবে? এসো একসঙ্গে লাঞ্চ করি তারপর তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আমরা চলে যাবো।
মিতু বলল, চল তন্দ্রা।
তন্দ্রা আর আপত্তি করল না।

সেদিন লাঞ্চের সময় তন্দ্রার সঙ্গে পারভেজের কয়েকবার দৃষ্টি বিনিময় হলো। ফাঁকে ফাঁকে দু’য়েকটা কথাও হলো, তোমাদের বাসা কোথায়? ভাইবোন ক’জন? তুমি কী পছন্দ করো? তোমার শখ কী? ইত্যাদি, ইত্যাদি। তন্দ্রা কথার উত্তর দিচ্ছিল। লাঞ্চ শেষে মিতু পারভেজকে খোঁচা মেরে বলল, ভাইয়া তুমি তো আমার ফ্রেন্ডের পুরো একটা ইন্টার্ভিউ নিয়ে নিলে, চাকরি দিবে নাকি?
মিতু বড়দের এভাবে কথা বলতে হয় না।
সরি ভাইয়া।
গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়ার সময় পারভেজ তন্দ্রাকে একটা ভিজিটিং কার্ড দিল। সেদিন কার্ডটা নিয়ে তন্দ্রা তার ব্যাগে রেখে দিয়েছিল। কয়েকদিন পর সেদিন রাতে ব্যাগে কী যেন খুঁজতে গিয়ে কার্ডটা তন্দ্রার হাতে উঠে এলো। তন্দ্রা কার্ডটা পড়ে দেখল, লেখা ছিল শওকত পারভেজ, ডাইরেক্টর ফাইন্যান্স। তারপর তাদের গ্রুপ অফ কোম্পানিজের নাম। পারভেজ কোম্পানির ফাইন্যান্স ডাইরেক্টর হলেও বয়সে তরুণ। একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি থেকে এম.বি.এ পাস করে পৈত্রিক সূত্রে কোম্পানির ডাইরেক্টর হয়েছে কিন’ চালচলনে এখনো ছেলেমানুষিই রয়ে গেছে। কথায় কথায় মিতু একবার বলেছিল পারভেজ তার চেয়ে মাত্র পাঁচ বছরে বড়। হ্যাঁ পারভেজের চালচলনেও তাই বোঝা যায়। তন্দ্রা কার্ড থেকে মোবাইল নাম্বারটা তার মোবাইলে সেভ করতে গিয়ে সুইচে টিপ পড়ল।
তন্দ্রা কিছুটা থতমত খেল। সঙ্গে সঙ্গে পারভেজ কল ব্যাক করল।
তন্দ্রা কী বলবে ভেবে পাচ্ছিল না। পরপর দু’বার রিং হলো কিন’ সে রিসিভ করল না, তৃতীয়বার তন্দ্রা রিসিভ করল, হ্যালো আস্‌সালামুয়ালায়কুম।
ওয়ালেকুম আস্‌সালাম। কে বলছেন প্লিজ?
সরি ভাইয়া আমি আসলে রিং দিতে চাইনি।
দিতে চাননি কিন্তু দিয়েছেন, নো প্রবলেম।
ভাইয়া আমি তন্দ্রা।
তন্দ্রা? তন্দ্রা?
মিতুর ফ্রেন্ড, সে-ই যে আপনি আমাদের লাঞ্চ করালেন, আমাকে লিভ দিলেন।
হ্যাঁ চিনতে পেরেছি, কেমন আছ?
জি ভাইয়া ভালো, আপনি?
আমিও ভালো আছি, তোমার লেখাপড়া কেমন চলছে?
এই তো মোটামুটি ভালো চলছে। আমি আশা করেছিলাম তুমি আরো আগে ফোন দিবে। এ্যানিওয়ে ফোন দিতে না চেয়েও যে ফোন দিয়েছ সেজন্য তোমাকে ধন্যবাদ।
না, আসলে আপনি অনেক বড় দায়িত্ব পালন করেন আর সবসময় ব্যস্ত থাকেন তো তাই ফোন দিই নি।
এখন থেকে ফোন দিবে।
আচ্ছা।
এসো না একদিন, আমার অফিসে।
জি ভাইয়া আসবো।

ক’দিন পরেই তন্দ্রা মিতুর সঙ্গে পারভেজের অফিসে গিয়েছিল, মিতু কিছুক্ষণ তন্দ্রার সঙ্গে পারভেজের টেবিলের সামনে বসেছিল। তারপর উঠে দাঁড়াল, তন্দ্রা তুই একটু বস, আমি আসছি।
তন্দ্রা একবার ডানে-বাঁয়ে তাকালো, আমিও যাই তোর সাথে। বলে তন্দ্রা উঠতে যাচ্ছিল।
পারভেজ বাধা দিল, বসো না।
মিতু তন্দ্রার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল, তুই বস রে। আমি একটু বড় ভাই’র সঙ্গে দেখা করে আসি। বলে মিতু উত্তরের অপেক্ষা না করে চলে গেল।
তন্দ্রা মিতুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একবার পুরো চেম্বারটায় চোখ বুলালো।
পারভেজ মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করল, কী দেখলে?
আপনার চেম্বারটা তো খুব লাক্সারিয়াস।
পারভেজ মৃদু হাসল।
এই অফিসে যদি আমি চাকরি করতে পারতাম!
তুমি চাকরি করবে?
হ্যাঁ।
আগে লেখাপড়া শেষ করো।
তন্দ্রা কিছু বলল না।
পারভেজ জিজ্ঞেস করল, তন্দ্রা কী খাবে, ঠাণ্ডা নাকি গরম?
মিতু কিছু বলল না।
পারভেজ বলল, তাহলে ঠাণ্ডা আনাই।
পারভেজ ইন্টারকমে দু’টা কোল্ড ড্রিঙ্কস এর অর্ডার দিল।
ড্রিঙ্কস খেতে খেতে দু’জনে অনেক কথা হলো। পারভেজ খুব সাজিয়ে গুছিয়ে কথা বলতে পারে, তার কথা বলার ভঙ্গিটাও অদ্ভুত, যেন একটা আকর্ষণ আছে। তন্দ্রা পারভেজ এর সঙ্গে যতই কথা বলছিল ততই মুগ্ধ হচ্ছিল।
কথায় কথায় পারভেজ বলেছিল, আমাদের পুরো ফ্যামিলিই বিজনেসম্যান।
কী প্রসঙ্গে যেন বলেছিল তন্দ্রার মনে নেই। আজ অনেকদিন পর তন্দ্রার মনে হলো সত্যি সত্যি পারভেজ বিজনেসম্যান, সারাদিন টাকার পিছনে ছুটোছুটি করে রাতে যাবে কোন কল গার্ল কিংবা সোসাইটি গার্লের কাছে এনজয় করতে, বাসায় বউ থাকবে যেন একটা সাইনবোর্ড, তার কোন স্বাধীন সত্তা থাকবে না, সারাদিন স্বামীর জন্য অপেক্ষা করবে, কোনদিন ইচ্ছা হলে স্বামী ঘরে ফিরবে আর না হয় ফিরবে না। পারভেজের কাছে বউ একটা পণ্য ছাড়া বেশি কিছুই না। যখন ইচ্ছা ব্যবহার করবে, যখন ইচ্ছা করবে না আর তন্দ্রা পারভেজের অনেকগুলো পণ্যের মধ্যে একটা পণ্যে।
(ছায়া পুরুষ উপন্যাসের অংশ বিশেষ)
নওরোজ কিতাবিস্তান

 
+ Submit Feedback