Search  



                                               

                                           

Md. Mamunur Rashid

Home  |  Bangladesh  |  হাসা-হাসি  |  ইসলাম  |  গল্প  |  

FacebookTwitter


 

Home >> সবুজ শহর (সায়েন্স ফিকশন)

সায়েন্স ফিকশান: চমকে জেগে গেল তিশা। পুরো বেডরুমটাই নীরব,শুধু ওর বুকের ধুকপুকানি ছাড়া আর কোন শব্দ কানে আসছে না।মাথা ঘুরিয়ে ঘড়ির দিকে তাকাল ও। ভোররাত,তিনটা বাজে। বাইরে অন্ধকার।গভীর ঘুমঘুমাচ্ছিল। তাহলে জাগল কেন? বালিশে মাথা রেখে পাশ ফিরতে যাবে, এ সময় চোখ পড়লওর বড় আলমারিটার দিকে। ভেতর থেকে দরজার ফাঁক দিয়ে বেরোচ্ছে ম্লান সবুজআভা। বিছানায় উঠে বসে ওটার দিকে তাকিয়ে রইল ও। আরও অনেক ছেলেমেয়ের মতই তিশাও আলমারির ভেতরের অন্ধকারকে ভয় পায়। বিশেষ করে এখন, নিস্তব্ধ এই রাতের বেলা, আলমারির দরজাটাকে ফাঁক হয়ে থাকতে দেখে।আলমারির ভেতরের অন্ধকারে কী যেন রয়েছে, যেন কোনও ভয়ঙ্কর আতঙ্কপুরীতে ঢোকার প্রবেশপথ ওটা। এই অন্ধকারঘরটাকেও ভয় পাচ্ছে এখন। ভয় পাচ্ছে বিছানাটাকে। ওরমনে হলো লম্বা কোনও একটা দানবীয় হাত এসে ওর গোড়ালিচেপে ধরে টেনে নিয়ে যাবেবিছানার তলায়। এরপর কী ঘটবে, কীভয়ঙ্কর ঘটনা, সেটা আর ভাবতে চাইল না।

যদিও ওর বয়স এখন বারো, যথেষ্ট বড় হয়েছে, বোঝে, এইভয় পাওয়াটা অমূলক। ওই আলমারি কিংবা বিছানার নিচে এমন কিছু নেই, যেটা ওর তি করতে পারে। কিন্তু আলমারির ভেতর থেকে যে সত্যিই সবুজ আভা বেরোচ্ছে। দুইচোখ ডলে নিয়ে বিছানায়বসেই সামনে ঝুঁকল তিশা, ভাল করে দেখার জন্য। অদ্ভুত এক ধরনের সবুজ রঙ।ঘাসের মত নয়, গাছের পাতার মত নয়, কেমন গা গোলানো সবুজ। ওর আলমারিতে কোনও আজব প্রাণী নেই তো, যার চামড়ার রঙ কবর থেকে তোলা সবুজ ছত্রাক পড়া পুরনো লাশের মত? উহুঁ, তা নেই! তাহলে ওটা কী? ফিসফিস করেনিজেকেই প্রশ্ন করল তিশা। কাছে গিয়ে দেখা ছাড়া জানার আর কোনো উপায় নেই। বিছানা থেকে নেমে আলমারিরকাছে হেঁটে যাওয়া ছাড়া। কিন্তু সেটা করতে চায় না ও। অন্তত এ মুহূর্তে। ওর টর্চ লাইটের আলো হতে পারে। আলমারির ভেতর কোনভাবে গড়িয়ে পড়ে, সুইচে চাপ লেগে জ্বলে উঠেছে। কিন্তু টর্চের আলোর রঙ সবুজ নয়। সবুজ সোয়েটার কিংবা কাপড়ের ভেতর দিয়ে আসতে পারে। সমস্যাটা হলো, সবুজ সোয়েটার নেই ওর। সবুজ একটা শার্ট আছে, তবে সেটাও আলমারিতে নয়, চেস্ট অব ড্রয়ারে রেখেছে। টর্চটাও আলমারিতে রাখেনি। দিন দুই আগে গ্যারেজে পকেট থেকে টাকা পড়ে গিয়েছিল, সেটা খোঁজার জন্য টর্চটা নিয়েগিয়েছিল, সেখানেই রেখে এসেছে। নাহ্, এই অদ্ভুত আলো অন্য কোন কিছুর! ‘কিসের?’ বিড়বিড় করল আপনমনে। হাত বাড়িয়েবেডসাইট ল্যাম্পটা জ্বালানোর চেষ্টা করল। কোন কারণে জ্বলল না ওটা।

কয়েক মুহূর্ত সুইচটা টিপাটিপি করে হাল ছেড়ে দিল। এমন কী হতে পারে, আলমারির ওই সবুজজিনিসটাই কোনভাবে জ্বলতে দিচ্ছে না ল্যাম্পটাকে? ব্যাপারটা অসম্ভব, কারণ মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেও ও বিছানায় শোয়ার সময় ওটা জ্বলছিল। বাল্ব্কেটে গেছে? নাকি ওই সবুজ আভাটাই ল্যাম্পটাকে নিভিয়েছে কোনও বিশেষ উদ্দেশ্যে? হয়তো অন্ধকারে থাকতে ভালবাসে ওটা। ওর কাছে কী চায়? ‘কচু চায়,’ জোরে শব্দ করে নিজেকে ধমক লাগাল তিশা। ‘ওটা একটা আলো। জ্যান্ত নয়। আমার তি করতে পারবে না।’ মুখে বললেও মনে মনে কথাটাবিশ্বাস করতে পারল না ও। প্রচণ্ড কৌতূহল দমন করতে পারছেনা। যতই ভাবনা-চিন্তা করুক, জানে, নেমে গিয়ে ওটাকে না দেখা পর্যন্ত স্বস্তি পাবে না।শুয়ে লাভ নেই। ওটা কী, না জেনে ঘুমাতেও পারবে না। হয়তো ওর ঘুমানোর সুযোগে সবুজ আলোটা ভয়াল কোনও রাসহয়ে গিয়ে গিলে খাবে ওকে। ওর বন্ধু তৃণার মতে এধরনের ঘটনা অসম্ভব নয়। তৃণার এ সব কথা এতদিন উড়িয়ে দিয়েছে তিশা, কিন্তু এ মুহূর্তে বিশ্বাসযোগ্য মনে হতে লাগল। একবার ভাবল, তৃণাকে ফোন করে। কিংবা ওর আরেক বন্ধু, তরুকে। কিন্তু এখন এভাবে ডেকে আনলে ওরা ওকে ভিতু ভাববে।

‘আমি ভিতু নই,’ নিজেকে বলল তিশা। ‘তরু হলে ওটা চোখে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে যেত দেখার জন্য। কোন কিছুকে ভয় পায় না ও।’ তরুকে তাই পছন্দ করে তিশা। ধীরে ধীরে বিছানা থেকে নেমে এল ও। মেঝেটা ঠাণ্ডা। আলমারির দিকে এগোল। গা কাঁপছে।ওর এগোনো টের পেয়েই যেন সবুজআভার উজ্জ্বলতা কিছুটা বেড়ে গেল। ‘প্লিজ, আমার তি কোরো না,’ আলমারির দিকে এগোতে এগোতেফিসফিস করে বলল তিশা। দরজার পাল্লা সামান্য ফাঁক হয়েআছে, সেখান দিয়ে ভেতরটা দেখা যাচ্ছে। সবুজআভায় ওর সমস্ত কাপড়ের রঙ সবুজ লাগছে। জুতো, স্যান্ডেল, হ্যাটগুলোও সবুজ। হ্যাট ভালোবাসে তিশা। ওর প্রিয়হ্যাটগুলোর এই বদলে যাওয়ারঙটা ভাল লাগল না। দেখে মনে হচ্ছে, আলমারির সমস্ত জিনিসগুলো যেন ওই সবুজ রঙশুষে নিয়েছে। আলোটাকে কেমন ঠাণ্ডা, অপার্থিব দেখাচ্ছে। আলোর উৎসটা দেখতে পাচ্ছে না ও। তবে বোঝা যাচ্ছে, আলমারির পেছন থেকে আসছে। ভাল করে দেখতে হলে দরজাটা পুরো খুলতে হবে। সেটা করতে চায় না ও।ভেতরে যে জিনিসটা রয়েছে, বেরিয়ে এসে সেটাকে বেডরুমে ঢোকার সুযোগ দিতে চায় না। ‘কিন্তু ওটা জ্যান্ত নয়,’ নিজেকে বোঝাল আবার তিশা। ‘ওটা আমার কোন খতি করতে পারবে না।’ দরজার নব চেপে ধরল তিশা। কাঁপা হাতে, টান দিয়ে আরেকটু ফাঁক করলআলমারির দরজা।

নিভে গেল সবুজ আলোটা। টান দিয়ে পাল্লা পুরোটাখুলে ফেলল তিশা। আলমারির ভেতরটা পুরো অন্ধকার। স্বাভাবিকভাবে যা থাকার কথা। ‘হ্যালো?’ ডাকল তিশা, কেমন বোকা বোকা লাগল নিজেকে। কেউ জবাব দিল না। ওর পেছনে, বিছানার পাশে, জ্বলে উঠল ওর ল্যাম্পটা। চমকে গেল ও। ভাগ্যিস, ল্যাম্পের আলোটা সবুজ নয়।আলো জ্বলাতে ভালই হলো। আলমারির ভেতরে ভালমত দেখতে পারল ও। ওর কাপড়, ওরজুতো, ওর হ্যাট, যেখানে যেভাবে রেখেছিল সেভাবেই আছে। তবে কিছু একটা ছিল ভেতরে, যা ওই আলো ছড়াচ্ছিল, ভাবল ও। জিনিসটা কী, বুঝতে পারল না। বেডরুম থেকেবেরিয়ে এসে মায়ের ঘরে উঁকি দিল ও। মা আর ওর ছোট ভাইটা ঘুমোচ্ছে। ওদের আলমারি খুলে দেখল। ওগুলোতে সবুজ আলো নেই। ফিরে এসে নিজের আলমারিটা দেখল আরেকবার। সবুজ আলো নেই দেখে খুশি হলো। তবে রহস্যটার সমাধাননা হওয়াতে খুঁতখুঁতিটা আরও বেড়ে গেল। আলমারির দরজা লাগিয়ে দিল। বিছানায় ফিরে এসে সুইচ টিপে বেডসাইড ল্যাম্পটা নিভিয়ে দিল ও। ঘুমিয়ে পড়ল এক সময়। গভীর ঘুমে অচেতন থাকায় টেরই পেল না আবার ঝটকা দিয়ে খুলে গেছে আলমারির দরজা।ফিরে এসেছে সবুজ আভাটা।ঘুমিয়ে থাকায় সবুজ আভার মাঝে ফুটে ওঠা অস্পষ্ট মুখটা দেখতে পেল না তিশা।মুখটা মানুষের মুখ নয়।