Search  



                                               

                                           

Md. Mamunur Rashid

Home  |  Bangladesh  |  হাসা-হাসি  |  ইসলাম  |  গল্প  |  

FacebookTwitter


 

Home >> একটু ভাললাগা, বাকিটা ভালবাসা
একটু ভাললাগা, বাকিটা ভালবাসা


কিছূটা আবেগ আর কিছুটা অস্থিরতা নিযে রূমে প্রবেশ করলাম। কি বলব, কিভাবে সামনে যাব কোন কিছুই বুঝতেছি না। বাড়ির ছোট ছেলে বলে অনেকে হাসাহাসি করতেছে, বিশেষ করে ভাবি। অসস্থিতে পরে গেলাম। তারপরও মাথাটা নিচে করে রূমে গেলাম। নীরা বউ সেজে বসে আছে। ইচ্ছে ছিল ছবিতে যেভাবে দেখি তেমন করে মাথার উপর থেকে কাপড়টা সরিয়ে ভাল করে দেখব। কিন্তু তার মাথার উপর কাপড়ই নাই। তাকিয়ে আছে আমার দিকে। রোদবৃষ্টি মিশ্রিত সমস্ত ভালবাসা নিয়ে সামনে গিয়ে একটা হাসি দেয়ার চেষ্টা করলাম।
সাথে সাথে একটা ধমক খেলাম।
“কতক্ষন ধরে কল করছি, আসার জন্য, আসনা কেন। দুই ঘন্টা ধরে একা একা বসে আছি।”
আরে বাবা, আসার সুযোগ থাকতে হবে তো। আর সবাই এখানে আছে। আসলে কেমন দেখা যায়।
“ কেমন দেখা যায় কি? আগে যে সারাদিন পিছে পিছে ঘুরাঘুরি করতা, ঐ সময় খারাপ লাগত না ?”
আর কিছু বলি নাই। এই মেয়ের সামনে আমি কখনো কিছূ বলতে পারি নাই। যদি পুরুষত্ব দেখাতে যাই, তবে নিজের ই সমস্যা । আসলে নীরার সামনে এইভাবে থাকতেই আমার বেশি ভাল লাগে। তার রাগের মাঝেও একটা দুর্বলতা খুজে পাই।
“ কি কথা বল না কেন? ঠিক আছে বস এখানে।”

জীবনের চরম একটা কাঙ্খিত মুহুর্তে দাড়িয়ে আমি। ছোট সময় খেকেই বিয়ে পাগল ছিলাম। আমি যখন ছোট তখন আমাদের আত্নীয় সজন অনেকেরই বিয়ে হয়ে গেল । আমার চাচাত বোনদের বিয়ের জন্য সবাই কি অস্থির থাকত। দেরি হয়ে যাচ্ছে, ছেলে পাওয়া যায় না, কত কিছু। ঐ সময় খারাপ লাগত, আমাকে কেন বলে না। আমি ওতো বিয়ে করতে চাই। ওই সময়ের কথা মনে হলে এখন কেমন অসস্থি লাগে। মাঝে মাঝে হাসি ও পাই। আজ আমার সেই ইচ্ছে পুরন হয়েছে। আগের মত চিন্তা ভাবনা এখন নাই, তবুও অন্য রকম অনুভুতি কাজ করছে।

“ কি হল দুরে কেন? কাছে আস।”
আমি আর একটু কাছে এগিয়ে গেলাম। নীরা এতক্ষন অনেক রেগে ছিল। এখন সম্পুর্ন ভিন্ন সে। মতলব কি বুঝতে পারছি না। এত তাড়াতাড়ি শান্ত হবার মেয়ে সে না।
“একটা কথা বলি, যদি কিছু মনে না কর।”
হা, অবশ্যই । বল।
“অনেক ক্ষিধা লাগছে। কিছু খাবারের ব্যবস্থা কর না ....”
আমি কিছুটা অবাক হয়ে গেলাম। এমন সময়ে এমন কথা....???

এখন আমি কি করে যাব ওদের সামনে । সবাই সজাগ। এখন গেলে কে কি বলে বসে? আর একটু আগে না খেয়েছ? ক্ষিধা কি বেশি লাগছে?
“ আমি তো একটু খেলাম। সবার সামনে কি খেতে পারছি। আর তোমার বাড়িতে আমার প্রথম দিন। আমাকে না খাইয়ে রাখবা? কিছুটা insult হয়ে গেল না।”
কথাটা শুনে বিরক্ত হলাম নাকি লজ্জা পেলাম বুঝতে পারি নাই। তবে কিছুটা অসস্থিতে পড়ে গেলাম। এমন কিছুতো বলি নাই যে insult হয়ে গেল। গত দুই বছর ওকে যা কিছু খাওয়ালাম আর যা যা করলাম, তাতে ভাল একটা গাড়ি না হোক একটা মটরসাইকেল অবশ্যই কিনতে পারতাম। আজ বুঝতে পারলাম এতদিন শুধু ওকে insult এর হাত থেকেই বাচালাম। আর কিছু নই।

“ কি ব্যাপার, হাবলার মত তাকিয়ে আছ কেন? ঠিক আছে, আনতে হবে না। তবে ভূল করেও যদি আমার বিছানায় আস, তবে তোমার একদিন কি আমার একদিন। এখন লক্ষী ছেলের মত দুর হয়ে বস, যাও ”

শশুর বাড়ির যৌতুক না এনেই এই অবস্থা। কপাল ভাল আনি নাই। তাহলে তো বাড়িতেই থাকা সম্ভব ছিল না। হাবলার মত রুম থেকে বের হলাম। মাকে বলার পর বললেন, “তুই যা, আমি খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি।”

আমি আর যাই নাই। ডাইনিং এ বসে আছি। এবার খাবার না নিয়ে যাচ্ছি না।
আমি আগে সবার সাথেই রাগারাগি করতাম। তবে নীরার সামনে চেষ্টা করেও কখনো পারি নাই। বিয়ের আগে প্রায়ই রাগ করত। তবে কখনো ছেড়ে চলে যাই নাই । যা করত সামনাসামনি। বিদায় নেয়ার সময় আবার সব ঠিক। নীরা যতই রাগ করত, আমি শুধু তাকিয়েই থাকতাম। কিছু বলতাম না। আসলে শোনতাম না কি বলে । কিভাবে বলে সেটাই দেখতাম। সে যখন রাগ করে কিছূ বলত, তখন তার চোখের মাঝে অনেক পানি জমে যেত। সেই সময় ওকে এত মায়াবী মনে হত, আমি কেন, কেউই কিছু বলতে পারবে না। মাঝে মাঝে ওর এই চোখের পানি নিয়ে কয়েকটা কবিতা লিখতাম। ভাবতাম পরের বার যখন এইভাবে রাগ করে চোখের পানি ঝড়াবে, তখন ওর এক ফোটা পানি হাতে নিয়ে এই কবিতাটা শোনাব। তখন সে রাগ সামলে নিয়ে আমার কাধে মাথা রেখে ওর সকল অনুভুতিগুলো আমাকে বলবে।

আমার এই আশা কখনো পুরন হয় নাই। তার চোখে জমে থাকা পানি কখনো পড়তে দেখি নাই যা নিয়ে আমি কবিতাগুলো ওকে বলতে পারি। কেমন মেয়ে সে, কাদে ঠিকই, কিন্তু পানি পড়ে না?

কিছূটা তিক্ত অভিঙ্গতা নিয়েই আমার সাথে নীরার পরিচয়।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে যাই ভর্তির কাজে। দুই থেকে তিন ঘন্টা লাইনে দাড়িয়ে কাজ শেষ করতে হবে। সবাই কিছূটা বিরক্ত। কয়েকজন ধাক্কাধাক্কিও শুরু করল। হঠাৎ পিছন খেকে একটা শব্দ শুনতে পেলাম। এক মূহুর্তের জন্য সবাই নিস্তব্ধ। পিছনে তাকিয়ে দেখি এক ছেলে গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। ছেলেটির সামনে দাড়িয়ে একটি মেয়ে বলতেছে, “কতবার বলতেছি ধাক্কা দিবেন না। কথা কানে যায় না। ছেলেদের এই এক দোষ। মেয়ে দেখলে হুশ থাকে না। মনে হয় ভিতরে ঢুকে যায়।”

তাকিয়ে রইলাম মেয়েটির দিকে। মুখে কোন লাগাম নাই। যা মনে চাই তাই বলছে। আরো অনেক কিছু বলল। ছেলেটি নিশ্চুপ দাড়িয়ে। একটু পর সবাইকে ছাড়িয়ে চলে গেল স্যারদের রুমে। কেউ কিছু বলল না। আমি দরজার সামনে দাড়িয়ে। এবার মেয়েটিকে ভাল করে দেখলাম। তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে চলে গেল আমার সামনে দিয়ে। বেশ সুন্দর বটে। সাহসিকতার রহস্য এখানেই।

কাজ শেষ করে রাস্তায় আসার পর তাকে আবার দেখলাম। অবশ্য মনে মনে দোয়া করছিলাম য়েন দেখা হয়ে যায়। হয়ে গেল। কথা বলার ইচ্ছে নিয়ে কয়েক পা সামনে গিয়ে সমান তালে হাটার চেষ্টা করলাম। ওর পাশে যাওয়ায় মেয়েটির চোখের মাঝে বারুদের উত্তাপ দেখতে পেলাম।

“ছেলেটিকে এইভাবে না মারলেও পারতেন। সে তো আর ইচ্ছে করে ধাক্কা দেয় নাই।”
কথাটি বলার পর কয়েকমিনিট অপেক্ষা করলাম। কথা বলায় আগ্রহী মনে হয় না। একটু পিছনে পড়ে গেলাম আমি। আবার সামনে গিয়ে কথা বলা ঠিক হবে কিনা চিন্তা করছি।
একটু পর সে নিজেই দাড়িয়ে গেল। তারপর যা যা কথা হল সবই লেখাপড়া বিষয়ক।
চলে যাবার সময় অনেক চিন্তা করে বিনয়ের সহিত বললাম, আপনার সাথে আর দেখা নাও হতে পারে। যোগায়োগ রাখা যাবে?

কলেজ আসলে তো দেখা হবেই।

কলেজে দেখা হবে ঠিক আছে। তাছাড়া কলেজ তো আরো দুই মাস পর শুরু হবে।
তো আর কি করার। অপেক্ষা করেন।...

আর কোন ভাবে কি যোগায়োগ রাখা যায় না।

আর কি করে রাখব ?

মেয়েটি অবশ্যই বুঝতে পারছে, আমি কি চাচ্ছি। তারপরও ভাব ধরে আছে। তারপরও যেসব কথা হল তার অনেকগুলোতেই কিছুটা অবাক হলাম। প্রথম পরিচয়ে এইভাবে কেই কথা বলে আমার ধারনা ছিল না। সবচেয়ে বেশি অবাক হলাম যখন আমি ওর মোবাইল নাম্বার চাইলাম। সে বলে. “ নাম্বার দিয়ে কি করবেন, ধাক্কাধাক্কি করার ইচ্ছে আছে নাকি? ”
এই কথা শোনার পর আমার ans কি হতে পারে ধারনা নাই। অবশেষে নাম্বার দিল।.....
বাসায় আসার পর প্রথম দিকে অবশ্য খুব একটা কথা হত না। ধীরে ধীরে কথা বলা বাড়তে থাকল। একসময় কলেজ শুরু , প্রতিদিন দেখা , কথা বলা , আড্ডা , বাসায় এসে আবার কথা । যতই সময় গেল তার অস্তিত্ত আমার মাঝে বাড়তেই খাকল। এইভাবে অনেক হাসি, বিরহ, ভয়, আনন্দ সবকিছু মিলিয়ে তিন বছরের ফলশ্রুতিতে আজ সে আমার ঘরে।

আমি নীরাকে propose করার চিন্তা করছিলাম কোন এক বৃষ্টির দিনে। আকাশ যখন মেঘে ঢাকা, সে সময় ভাবলাম hero টাইপ একটা ভাব নিয়ে একগুচ্ছ ফুল হাতে নীরাকে propose করব। কিন্তু হতাশাজনকভাবে ঐ দিন বৃষ্টি হয় নাই। কি আর করার, বলতে তো হবে। তাই local hero হয়েই বলে দিলাম।

খাবার গরম হয়ে গেল। নিয়ে গেলাম রূমে। আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি। এতদিন শুধু ভালবাসাটাই দেখেছিলাম। আজ এর মাঝে একটু অধিকার আর একটু ভয়ও মিশে গেল। তবে সবচেয়ে বেশি ভাল লাগল যেটা তা হল নীরা তার পরিবার ছেড়ে এসে আজ অনেক স্বাভাবিক মনে হল। যেন অনেক আগে থেকেই এখানে। খাবার শেষ করার পর তার পাশে গিয়ে বসলাম। এখন তার কথা শুরু হল। থামাতে অবশ্য কষ্ট হবে। কথা বলতেই থাকে বলতেই থাকে। আমারও ভালই লাগে ভালই লাগে।

“ জানো, আমি যখন প্রখম আমার গ্রামে যাই, ঐদিন পুকুরের মাঝে................”

সে কি বলছে তা শোনার চেষ্টা আমার মাঝে নাই, কথা বলছে সেটাই দেখছি। রহস্যময় কিছু বলতে চাইলে তার চোখগুলো কিছুটা লাল হয়ে যাই, আবার হাসির মাঝেও অনেক কিছূ খুজে পাই। আসলে খুজার চেষ্টা করি তার মনের ভাষাগুলো বুজতে, যেন সে মন থেকে যেভাবে চাই সেভাবেই গুছিয়ে নিতে পারি তার সাথে......