Search  



                                               

                                           

Md. Mamunur Rashid

Home  |  Bangladesh  |  হাসা-হাসি  |  ইসলাম  |  গল্প  |  

FacebookTwitter


 

Home >> তেমনভাবে ভালবাসলে, পাথরও ঝর্ণা হয়ে যায়

তেমনভাবে ভালবাসলে, পাথরও ঝর্ণা হয়ে যায়

til.jpegআবীর মুখোপাধ্যায় :
আমার কাছে এখনো পড়ে আছে/ তোমার প্রিয় হারিয়ে যাওয়া চাবি
কেমন করে তোরঙ্গ আজ খোলো !
থুৎনি ‘পরে তিল তো তোমার আছে/ এখন ? ও মন, নতুন দেশে যাবি ?
চিঠি তোমায় হঠাৎ লিখতে হলো
খেয়ালিপনার যেন শেষ নেই রঞ্জাবতীর! ওই হয়েছে ওর এক সমস্যা। ও ঠিক কোনওদিনই মনের মধ্যে মনখারাপ পুষে রাখতে পারে

না বেশিক্ষণ। এই তো, একটু আগেই কর্ন অ্যান্ড কাবাবের উষ্ণ আতিথ্যে দু’ পাত্তর চড়িয়ে, দূর মেঘের তলপেটের দিকে তাকিয়ে ছিল দিব্য।
আর এখন? ঠোঁটে, চোখে, শরীরের মিত ইশারায় ছটফটিয়ে আমার বাহুর মৃদু কোণে আশ্রয় নিয়েছে! ওর উষ্ণ কবুতর দিলের গহনে, ওর অন্তরঙ্গ উষ্ণতার আঁধারে, মুখ ডুবিয়ে আমার মধ্যেও দারুণ শান্তির নিশ্চয়তা। রুফটপের হিমে যেন মিঠে আরামের বিভা।
পানশালার একেবারে প্রান্তরেখার যে টেবিলে বসে আছি ও আর আমি, তার ঠিক উল্টো দিকে একা এক চিনে দুহিতা। সামনের ক্রিসমাস উৎসবের রোশনাই ঝিলমিল করছে স্বল্পবসনার চোখের তারায়। হাসিতে, সোনালি শরীরে। কোহল সিক্ত হয়ে যেন প্রথম শীতে কলকাতার রাত্তিরকে উপভোগ করতে মধুশালায় এসেছে এই সোনালি পাখি। অন্য টেবিলগুলোয় ইতি উতি যুগলেরও চোখ তার দিকে উদগ্রীব!
চোখ সরিয়ে আকাশবিতান সংলগ্ন কাচঘরের ভিতরে রাখতেই দেখলাম, সুখদার কাউচে একটি পঞ্জাবি পরিবার খানা-পিনায় মশগুল। মনে পড়ে গেল, দক্ষিণী থেকে কন্টিনেন্টাল, কী চাইনিজ, কী মুঘল, মায় ডেজার্টেরও রাজকীয় আয়োজন রয়েছে কর্ন অ্যান্ড কাবাবে। তবে সব ধরণের রহিস কাবাব-ই এঁদের দুর্ধর্ষ! রয়েছে সব ধরনের পানের কেতা দুরস্ত বন্দোবস্তও। দুজনের জন্য পানাহারে হাজার যথেষ্ট। এখানেই শেষ নয়, পাঁচশোর বেশি টাকার বিল হলে বাড়িতে খাবার আনিয়ে নিতে পারেন। চেলো কাবাব থেকে সিজলার, নিভৃতি, রোমান্স, প্রেম, রুফটপ সব মিলিয়ে এমন আয়োজন কিন্তু তুলনায় বেশ পকেটরেস্ত।
লিফট থেকে বেরিয়ে রেস্টোরেন্টের ভিতরমহলের গলি পথ দিয়ে ছাদে আসার সময় ওয়েটার জানিয়েছিল, আমরা ভিতরে সোফায় অথবা ওঁদের উপরের সিঙ্গিং-বার এ বসতে আগ্রহী কিনা। কিন্তু রঞ্জার তো রুফটপের নিভৃতে বসতেই এখানে আসা। সুতরাং আকাশবিতান সই। আর এখন এখানে বসে মনে হচ্ছে, রুফটপে না বসলে সবটা মিথ্যে!
বরাবরই একটু ধরে খাই আমি। রঞ্জা খুব দ্রুত পেগ তোলে। সেই কারণেই ওর দু’ নম্বর পেগটা শেষ হয়ে যাবার পর উসখুস করছে। বেশ মালুম হচ্ছে আমার, ঠাণ্ডি হাওয়ায় নেশাটাও চড়ছে ওর। ওর ইচ্ছে-অনিচ্ছের ঘূর্ণিপাকে আমারটা শেষ হতেই, ফের দুটো লার্জ হুইস্কি আর চিকেন রেশমি কাবাব-এর অর্ডার দিল রঞ্জা। একটা সিগারেট ধরিয়ে বলল,
- ক্রিসমাস-এ এখানে আসাই যায়। উষ্ণতার জন্য যুগলদের তুখোড় নিশিঠেক।
- সেটা হয়তো ঠিক রঞ্জা। কিন্তু, নাইটক্লাবে প্রেম কোথায়!
আমার কথায় হেসেই খুন উড়ুক মেয়ে। ওর হাসির মধুলা গমকে আর উত্তরের হিম হাওয়ায় ছাদের রাজ্যে যেন নরম আলো নেমে এল। প্রসারিত রাত্রিরাগে সেই আলোয় রঞ্জার বুকের ওঠাপড়া- এক স্পর্শময় উদার সঙ্গের সাহসী আমন্ত্রণ!
ওর চিবুকের তিলটি খুব মিষ্টি লাগছে এখন আবার। থেকে থেকেই ভারী মিষ্টি লাগে তিলটি আমার। কতবার যে ওর অজান্তে ছুঁয়েছি শঙ্খচিলের মতো! সে ভিড় থইথই গড়িয়াহাট হোক অথবা, কোলাহলে মাতোয়ারা রাতপার্টি। আমার মৃদুল আঙুলের চকিত স্পর্শে তুমুল লজ্জায় মেয়ে নুয়ে পড়েছে তক্ষুণি। আবার কতবার যে ওর সাবধানী চোখ শাসন করেছে আমার বিনীত অছিলা!
এখন সেই ইচ্ছেটা পেয়ে বসেছে আমায়। আর মনে পড়ছে, হাফিজ! ‘একটি কালো তিলের তরে/ দিই বিলিয়ে সমরকন্দ/ ও রত্নখচা এই বোখারা’! খুব ইচ্ছে করছে নিঃশব্দের তর্জনীতে আলতো করে ছুঁয়ে দিতে ওর লাখো হিরামোতির- একটি তিলের চুড়ো!
রঞ্জা ঠিক বুঝতে পারে আমার ইচ্ছে পাখির ডানার উড়ান। ওর চোখ পড়তে পারে আমার ভিতরমহলের আনাচকানাচ। সেই নিবিড় পাঠে বসে কোহলে চুমুক দিয়ে, শরীর এলিয়ে বসল মেয়ে। তারপর, হাসি সামলে-সুমলে অমিতাভ দাশগুপ্তের ‘কয়েক টুকরো’ বলল ঋদ্ধ সংলাপে, ‘তেমনভাবে ভালবাসলে/ পাথরও ঝর্ণা হয়ে যায়’।
ওর অমোঘ উচ্চারণে চমকে উঠলাম! যেন করতলে নিবেদন এল। মেধার চমক সরিয়ে বোধদীপ্ত নয়নতারার পানে চেয়ে বললাম,
- তুমি তো নারী!