Search  



                                               

                                           

Md. Mamunur Rashid

Home  |  Bangladesh  |  হাসা-হাসি  |  ইসলাম  |  গল্প  |  

FacebookTwitter


 

Home >> ঠোঁটের ওপর বৃষ্টি টুপ
… সন্ধ্যায় আমি পৌঁছোবার পরেই বৃষ্টি এল/ সে বছরে তা সবচেয়ে স্মরণীয় বৃষ্টি/ কী যে তার তেজ, ঝিমুর ঝামর, আকাশ চেরা/ চিচিং ফাঁক!/ এর মধ্যেই পড়তে বসা, লিখতে বসা একটা জানলা খুলে/ আজকে শুধুই মেঘদূত আর মেঘদূত, মেঘদূত…। (সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়)
মিডলটন রো ধরে হাঁটতে হাঁটতে স্মৃতিতে ঘুরছিল কাফি ঠাটের প্রিয় রাগটার এস্রাজি পকড়। র ম র স, ণ্ প্ ম্ ণ্ ধ্, ন স। আচ্ছা, মিঞাঁ তানসেন সত্যিই কি বৃষ্টি নামাতেন ধৈবত বর্জিত এই রাগ গেয়ে? শুনেছি, একবার গুজরাটের আহমেদাবাদে পণ্ডিত যশরাজ মিয়া কি মল্লার গাইছিলেন, অঝোরে বৃষ্টি নেমেছিল মহল্লায়। আরেক বার ২০০২-এ দিল্লিতে, গাইতে গাইতেই বৃষ্টি! র্স ণ প, ম প, জ্ঞ ম র স!

বৃষ্টির বন্দিশে ভিতরজলে ভিজতে ভিজতে কখন যে ওয়ান স্টেপের দোতলায় এসে বসেছি, জানতেই পারিনি। কখনও-সখনও এমন হয়, দেখবেন। হয়তো অপলক তাকিয়ে আছেন, মানে ঠিক তার-ই দিকে সরাসরি তাকিয়ে আছেন, অথচ দেখলেন-ই না। কী দেখলেন না? কিউবিকলের উল্টো দিকে মৃগনয়নার মনখারাপ! অথচ, সে শুধু আপনার জন্য ফ্লোরাল প্রিন্টেড পাটিয়ালার সঙ্গে ফ্যাবের জামরঙা কুর্তি পড়ে এসেছিল আজ!

রঞ্জা এখনও পথে। রুদ্র আর অনির্বাণের এই নবপরিচয়ে সানন্দ উপস্থিতি আমার বেশ লাগছে। আমার বিশ্বাস, রঞ্জারও লাগবে। সেটা ওদের বলতেই রুদ্র বেশ লজ্জারুণ হয়ে পড়ল!

প্রসঙ্গ এড়াতে আমিও পার্ক স্ট্রিটের স্টিফেন কোর্টের নিচের এই অভিজাত রেস্তোরাঁ-র ফিনিক্স জন্মের কথা পাড়লাম। মেনুকার্ড ওল্টাতে ওল্টাতে এঁদের কন্টিনেন্টালের বাহার দেখাচ্ছিলাম ওদের। রুদ্রকে বললাম,

- ২০১০ সালের ২৩ মার্চের অগ্নিকাণ্ডের কথা মনে আছে তোমাদের? সে সময় ‘ওয়ান স্টেপ-আপ’ বেশ কিছু দিন বন্ধ রাখা ছিল জানো!

- সে-বার তো আগুনে রেস্তোরাঁর কোনও ক্ষতি হয়নি?

রুদ্র কিছু বলবার আগেই অনির্বাণ প্রশ্ন করল। ওর জবাবে বললাম,

- তা হয়নি, তবে তার প্রায় বছর দু’য়েক পর একটা সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটেছিল রেস্তোরাঁর হেঁশেলে। জব্বর ক্ষতি সেবারই হয়েছিল। একজন কর্মী বেশ কাবু হয়েছিলেন। দমকল… ওই তো রঞ্জা এসে গেছে!

একটা ধূসর হালকা-পুলকা ছোট হাতা পুলওভারের সঙ্গে চনমনে ক্যাজুয়াল ক্যাপ্রি পড়েছে ও। সঙ্গে ক্রশ করে কাঁখের ঠিক নিচে লেদার ওয়ার্ল্ডের ট্রেন্ডি ব্যাগ। একটা রোদচশমা আর কয়েকটা বিডসের সুতো ঝুলছে ব্যাগের গোপন গহ্বর থেকে। ঠোঁটের রঙ কি আজ টেরাকোটার মাটিতে মাখামাখি!

কেমন করে যেন সব কিছুতেই ওকে দিব্য মানিয়ে যায়। কিছু সাজলেও কী, অথবা না সাজলেও কী। পথের ক্লান্তি কখনও যেন ছুঁতে পারে না ওকে। এই যে শান্তিনিকেতন থেকে এতখানি পথ এল, ছাতিমতলার প্রাণের আরাম আর মনের আনন্দ যেন বয়ে নিয়ে এল মেয়ে।

উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান জানিয়ে ওর চেয়ার এগিয়ে দিলাম। স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে অনির্বাণও উল্লসিত হয়ে গোল বাধাল উঠে দাঁড়িয়ে, যোগ দিল রুদ্র। রঞ্জা ওদের সঙ্গে সহবত বিস্তার করে বসতে বসতে মিত স্পর্শে চিবুকের কাছে সরে আসা অবাধ্য চুলকে শাসন করল। মেনু কার্ড এগিয়ে দেবার বিনীত অছিলায় ওর করতল স্পর্শ করলাম!

এমনি করেই বোধহয় এই সময় জনতা রিলিফ খুঁজে নেয় তার প্রাত্যহিক রোজনামচা থেকে। বা, দৌড়ে বেরিয়ে পড়তে চায় এটিকেটি কর্পোরেট বোরডম থেকে। তারপর ঢুকে পড়তে চায় এক লহমায় বোহো দুনিয়ায় বিন্দাস। সকলে থিতু হতে অর্ডার নিয়ে গেল বিনম্র বার বয়।

হাজার কথার ফাঁকে জলদি জলদি দিয়েও গেল সে। রহিস চিজ নিমকি আর চার পাত্তর লার্জ হুইস্কি। জানি, সময় বুঝে এসে পড়বে স্টেক! রঞ্জা ওর ব্যাগ থেকে এরই মধ্যে একটা সুবর্ণরেখার প্যাকেট বের করে রুদ্রকে দিয়ে বলল,

- এস্রাজের এই সিডিগুলো তোমাদের যুগলের জন্য। জানি, একটা নিজস্ব রেস্তোরাঁ করার খুব সখ তোমার। সেখানেও বাজাতে পারো!

অনির্বাণ চিলের মতো ছোঁ মেরে রুদ্রর হাত থেকে প্যাকেটটা নিয়ে বলল,

- দাও তো বাপু। সব তো আমাকেই গুছিয়ে রাখতে হয়!

ওর এমন কপট চপলতায় রঞ্জা তো হেসেই অস্থির। একটু পরেই টেবিলের নিচে ছুঁই-ছুঁই দূরত্বে একে অপরের সঙ্গে খুনসুটিতে মাতল ওরা দুটিতে। সেই অবসরে রঞ্জাও একটু সরে এল ফকিরের বুকের গহনে। আর সুরজিতদার পাঠানো রবি-ছবির সম্ভার তুলে দিল আমার হাতে।

শান্তিনিকেতনের টিপিস-টিপিস বর্ষা দিন মনে পড়ল। নিষ্পাপ সরল ওর চোখে-মুখে-ঠোঁটে সেই বর্ষা দিনের কাম-সঘন আদর আমন্ত্রণলিপি। কোহল সিক্ত সংলাপে নাই বা লেখা হল সে লিপির আদর উপাখ্যান! আজকে শুধুই মনে মনে মেঘদূত খেলা!

ক্রমশ…

লেখক : আবীর মুখোপাধ্যায়