Search  



                                               

                                           

Md. Mamunur Rashid

Home  |  Bangladesh  |  হাসা-হাসি  |  ইসলাম  |  গল্প  |  

FacebookTwitter


 

Home >> একান্ত গোপনে পরকীয়া
শরৎকালর আকাশ ঝক ঝক করছে মাথার উপর। আকাশে ছানা কাটা মেঘ বেশ সুসজ্জিত। কাশবন ভরে গেছে ফুলে ফুলে। ভাপসা গরম কিছুটা কমতে শুরু করেছে, তারপরও ফোঁটায় ফোঁটায় ঘাম ঝরছে। বিষন্ন মেয়েটিকে রোদের ঝলমলে আলোয় সত্যি যেন অন্যরকম সুন্দর মনে হচ্ছে। এত বড় অপরাধের পরও তার মাঝে
যেন কোন অপরাধবোধ কাজ করছে না। তার মাঝে হয়ত শ্বস্তির নিঃশ্বাস বয়ে যাচ্ছে।
সালিশি আসরের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে পুষ্পিতা। অপরাধ পরকিয়া। স্বামী বর্তমান থাকতে কে বা কার সাথে পরকীয়া গড়ে উঠেছে। কিন্তু পরকীয়া শব্দটির সঠিক ভাবার্থ মানতে নারাজ পুষ্পিতা। একান্ত গোপনে দেহ মনের সংযোগ ঘটেছে মনের মানুষের সাথে। একান্ত নির্জনে হৃদয়ের অনন্তে সুস্বাগতম জানিয়েছে প্রিয়তমকে, সবিনয় নিবেদন করেছে হৃদয়ের। এখানে অপরাধ বোধটা কেন তাকে তাড়া করছে? এখানে অপরাধ শব্দটা কেন প্রয়োগ হবে?
মোড়ল পুনরায় বলল, বল তোমার এই অপরাধের কী শাস্তি হতে পারে।
ভাবলেশহীন ভাবে মোড়লের দিকে কিচ্ছুক্ষণ তাকিয়ে চোখটা নামিয়ে নিল পুষ্পিতা। প্রেম যে কোন সময় যে কারো জীবনে আসতে পারে, স্বামী বর্তমান থাকলে তাতে কী আসে যায়। আর এখানে স্বামী বর্তমানের কথাটাই বা কেন আসবে। ৭ দিন ১০ দিন যায় হোক শরীরে তো মরদের হাত পড়েছে। জোড় লাগার স্বাদ তো শরীর পেয়েছে। আট বছর তো আর শরীর বোঝেনা। দিন যত যায় শরীর আরো চিকন হয়। মনের ভিতর সুখ পাবার ইচ্ছে বাড়ে, বিনা মরদে থাকতে তার ভালো লাগেনা। শরীর কারো স্পর্শ চাই। আট বছর আগে পুষ্পিতার স্বামী আসিফ মধ্যপ্রাচ্যে গেছে। প্রথম প্রথম কোন খোঁজ ছিল না। বছর দুয়েক পর থেকে মাঝে মাঝে চিঠি আসে, মাঝে মাঝে অল্প সল্প টাকা কড়িও আসে। তাতে তো আর যৌবন জীবন চলে না। পুষ্পিতার এমনই দশা না বিধবা, না সধবা। বিধবা হলে নতুন শাড়ী চুড়ি পরে বিয়ের পিড়িতে বসতে পারত বাইশের কৌঠায় পর্দাপণকারী পুষ্পিতা।
ভিড়ের মধ্য থেকে একজন বলে উঠল আমরা অধির আগ্রহে আপেক্ষা করছি, তোমার এই কুকর্মের সঙ্গীর পরিচয় জানতে। আরও একজন বলে উঠল, ওকে এতো সুন্দর করে বলার তো কোন প্রয়োজন নেই। দু-ঘা বসিয়ে দিলে দেখবে পড় পড় করে নাম করে দিবে। তার পর দুজনকে একসাথে শাস্তি দিলেই হবে।
এবার দু-ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল চোখে থেকে। নিজের সাথে সাথে ভালোবাসার প্রিয় মানুষটাকে আপরাধের কাঠগোড়ায় দাঁড় করতে পারবে না পুষ্পিতা।
বড় রাস্তার মোড়ে বছর খানেক আগে নিচ তলায় এক শিক্ষক ভাড়া এসেছে। আসা যাবার পথে মাঝে মাঝে দেখা হতো, কথা না হলেও চোখের আদান প্রদান হতো। শ্যামলা সুশ্রী, কালো নয়ন, সুদীপ্ত সরল হাসি, সুঠোল দেহ, আনায়াসে হৃদয় গ্রাহী পুষ্পিতা। অনায়াসে যে কোন পুরুষের নজর কেড়ে নিবে। সরাসরি কথা না হলেও চোখে চোখে ভাবের আদান প্রদান হতো। না বলা কথাগুলো চোখের ভাষায় প্রকাশ পেত।
সেদিন কালো মেঘ ছেয়ে গেছে আকাশ, যে কোন সময় বৃষ্টি নামবে। টান পায়ে হাঁটা ধরে পুষ্পিতা। হাতে ভারী থালে। হাঁটতে বেশ কষ্টই হচ্ছে থলের ভারের কারণে। খুব বেশি এগোতে পারছে। বৃষ্টির নেমে আসলো, সাথে দমকা হাওয়া। বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে। একটি বাড়ির সিড়ির নিচে আশ্রয় নিল। বার বার পিছন ফিরে তাকাচ্ছে কিচ্ছুক্ষণ ইতস্তত বোধ করছে এখানে এভাবে দাঁড়ানোর জন্য।
দরজা খোলার শব্দ।
আরে আপনি!
জ্বিঃ
আপনি এভাবে বাইরে ভিজছেন কেন, ভিতরে আসুন।
না! এখানেই ঠিক আছি।
না! না! তাকি ভাবে হয়। ভিতরে আসুন, আসুন।
না, থাক বলে ভিতরে ঢুকে চারি পাশে তাকিয়ে দেখছে, মনে মনে কাউকে খুজছে। পুষ্পিতা বলে উঠল, আপনার মিসেস কেতো দেখছি না।
বাবু ও তার আম্মু বেড়াতে গেছে। অসুবিধা নেই ভিতরে আসুন বসুন। আপনিতো সম্পূর্ণ ভিজে গেছেন। বলে পুষ্পিতার দিকে শিক্ষক শহীদ আপাদমস্তক চোখ বুলিয়ে নিল।
বৃষ্টির পানিতে ভিজে পুষ্পিতাকে একটু অণ্য রকম সুন্দর লাগছে।
বৃষ্টিতে ভেজা পুষ্পিতাকে মহাকালের দেবী কিংবা অপার রহস্যময়ী কোন আপ্সরী মনে হচ্ছে। নিজের অজান্তেই শরীরে মাঝে আদিম ক্ষুদা অনুভুত হচ্ছে শিক্ষক শহীদের মাঝে। বৃষ্টি ও যেন থামছেনা। খোস গল্পের মাঝে কখন যে চির কাংখিত পুষ্পিতার হাতদুটো বুজের কাছা কাছি ধরেছে। ভালোবাসা আদান প্রদান হয়েছে। রুপসীর ভেজা কেশলর ললাটে অধরে বাহু যুগলে সিক্ত দেহের রেখা রেখায় ঠোটেদের চাষাআবাদ হয়েছে। অভিসারিকা লজ্জায় রিক্ত হয়ে ঘর ফিরে এসছে। মাঝে মাঝেই সবার চোখের আড়ালে মিলিত হয় দুজন। মাস খানিক যেতে না যেতেই পুষ্পিতা তার মাঝে আর একজনের আসিস্ত পেয়েছে। কিন্তু সাহস করে শহীদকে জানাতে পারিনি। মাস তিনেক পেরুতেই আসে পাশে সবার অজনা রইলো না পুষ্পিতার এই অস্তিতের কথা।
সবাই যখন বলা বলি শুরু করালো বল তোমার সন্তানের বাবা কে? বল মোড়ল বললো তোমার এখনও সময় আছে বল তোমার এই কু-কর্মের সঙ্গি কে? তা না হলে তোমাকে ব্যাভিচারিনীর দায়ে পাথর ছুড়ে মারা হবে। যতক্ষণ না তোমার মৃত্যু হয়।
যে মোড়ল পুষ্পিতার বিচার করছে সেও তো সাধু নয়। সেও তো পুষ্পিতাকে ভোগের নজরে দেখতো। এখনেই জনতার মাঝে দু-তিনজন উপস্থিত আছে তার মোড়লের শয্যা সঙ্গী। মোড়লও তো সাধু নয় কিন্তু মোড়লের বিচার কে করবে।
মোড়ল পুষ্পিতার দিকে নজর দিয়েছিল ফল হয়নি। শহীদের মাথা ঝিমঝিম করে উঠলো বুকের ভিতর পাহাড় ভাঙ্গার তোলপাড়। ভয়ংকর এক বিভীষিকা তাকে গ্রাস করছে। ভালোবাসার মানুষের এই বিপদ তার সহ্য হচ্ছে না। ছুটে যেয়ে স্বীকার করে নিতে ইচ্ছে হচ্ছে আপরাধের। কিন্তু সম্মান হানী আর স্ত্রী পুত্রকে হারানোর ভয় তাকে আরও বেশী পীড়া দিচ্ছে।
পুষ্পতা এবার সরাসরি শহীদের দিকে তাকিয়ে আছে। সে পারতো সবার জানা জানি হবার আগে সন্তান টাকে নষ্ট করতে কিন্তু সে ভালোবাসার চিহ্নটাকে নিজের খুব কাছাকাছি রাখতে চেয়েছে। সে ভালোবাসার কোন পরিচয় চাইনি। তাই সে নিজেকে কোন অপারাধিও ভাবছে না।
মোড়ল বলল, অনেকটা সময় নষ্ট হয়েছে অনেকটা ক্ষন অতিবাহিত হয়েছে। এখন বিচার শুনাবার পালা। পুষ্পিতা দোষী সাব্যস্ত। স্বামী থাকতেও সে অন্য পুরুষের সাথে দেহিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। তার পর সে তার সঙ্গির নাম উল্লেখ করতো গ্রাম্য সালিশের রীতি অনুযায়ী তার অপরাধের শাস্তি কিছুটা মওকুফ হতো। যেহুতু সে অপরাধির নাম উল্লেখ করেনি তাই সে একাই দোষী সাবস্ত্য এখানে প্রত্যেক জনতার হাতে পাথর দেওয়া হবে। যতক্ষন পুষ্পিতার রুহ তার দেহটাকে ছেড়ে না যায় ততক্ষণ তাকে পাথর নিক্ষেপ করা হবে।
প্রত্যেকের হাতে পাথর দেয়া হলো শহীদের হাতেও পাথর দেওয়া হলো। শহীদের চোখ টল মল করছে এখনিহয়তো কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়বে।
পুষ্পিতা অপালক ভাবে রুবেলের দিকে চেয়ে আছে। মৃত্যু আগ মুহর্ত হয়তো সে শহীদকে দেখতে চায়। তার এখন একটাই কাম্য ভালোবাসার প্রিয় মানুষটাকে মন প্রাণ ভরে দেখা।
 
+ Submit Feedback